গুগল তাদের জেমিনি ন্যানো মডেলের মাধ্যমে অ্যাপ ডেভেলপারদের ডিভাইসেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহারের ক্ষমতা দিতে প্রস্তুত। আসন্ন আই/ও ডেভেলপার কনফারেন্সে এই ঘোষণাটি আসার সম্ভাবনা রয়েছে, যা বুদ্ধিমান এবং ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা-সচেতন অ্যাপ্লিকেশনগুলোর একটি নতুন যুগের সূচনা করবে। এই অ্যাপ্লিকেশনগুলো সরাসরি ব্যবহারকারীর ডিভাইসে কাজ করতে পারবে, ফলে ক্লাউড সংযোগের প্রয়োজন হবে না।
এই যুগান্তকারী উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হলো গুগলের এমএল কিটে (ML Kit) একত্রিত করা নতুন এপিআই (Application Programming Interfaces)। এমএল কিট হলো ডেভেলপারদের জন্য ডিজাইন করা একটি মেশিন লার্নিং টুলের সমন্বিত স্যুট। এই এপিআইগুলো ব্যবহার করে ডেভেলপাররা কোনো জটিলতা ছাড়াই জেমিনি ন্যানোর ক্ষমতা তাদের অ্যাপে যুক্ত করতে পারবে। এর ফলে নিজস্ব মেশিন লার্নিং মডেল তৈরি এবং স্থাপন করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
এই নতুন এপিআইগুলো ডেভেলপারদের অন-ডিভাইস এআই মডেলের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে দেবে। এর মাধ্যমে টেক্সট সারসংক্ষেপ, উন্নত প্রুফরিডিং, জটিল বাক্য পুনর্লিখন এবং এমনকি ছবির জন্য বর্ণনা তৈরি করার মতো ফাংশনালিটিগুলো ব্যবহার করা যাবে। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো, এই সমস্ত কাজ ব্যবহারকারীর ডিভাইসেই হবে, যা ডেটা গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
অন-ডিভাইস এআই-এর সম্ভাবনা উন্মোচন
এই পদক্ষেপের তাৎপর্য সুদূরপ্রসারী, যা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশনগুলোর একটি নতুন প্রজন্মকে প্রতিশ্রুতি দেয়, যা আরও বুদ্ধিমান, দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল এবং ব্যবহারকারীর গোপনীয়তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। এমন অ্যাপ্লিকেশনগুলোর কথা ভাবুন যা:
- কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দীর্ঘ আর্টিকেল বা ডকুমেন্ট সারসংক্ষেপ করতে পারে: মূল তথ্য খুঁজে বের করার জন্য আর বিশাল টেক্সটের স্তূপের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে না।
- রিয়েল-টাইমে ব্যাকরণগত ভুল এবং টাইপোর জন্য ইমেল এবং মেসেজ প্রুফরিড করতে পারে: ত্রুটিমুক্ত যোগাযোগ তৈরি করা এখন সহজ।
- আরও স্পষ্ট এবং সংক্ষিপ্ত করার জন্য বাক্য এবং প্যারাগ্রাফ পুনর্লিখন করতে পারে: আরও কার্যকর এবং প্রভাবশালী লেখা তৈরি করুন।
- দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যবহারকারীদের জন্য ছবিগুলোর বর্ণনা তৈরি করতে পারে, যা তাদের কাছে আরও সহজলভ্য করে তোলে: আপনার অ্যাপ্লিকেশনের অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্ষমতা বাড়ান।
এগুলো অন-ডিভাইস এআই-এর রূপান্তরমূলক সম্ভাবনার কয়েকটি উদাহরণ মাত্র। ডেভেলপারদের এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার সরঞ্জাম দিয়ে গুগল একটি বুদ্ধিমান এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব মোবাইল অভিজ্ঞতার পথ প্রশস্ত করছে।
জেমিনি ন্যানোর ক্ষমতা
জেমিনি ন্যানো, নামটি যেমন বলছে, এটি গুগলের শক্তিশালী জেমিনি এআই মডেলের একটি ছোট সংস্করণ, যা বিশেষভাবে মোবাইল ডিভাইসে চালানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ক্লাউড-ভিত্তিক সংস্করণের মতো এটির কম্পিউটেশনাল ক্ষমতা না থাকলেও, এটি এখনও অনেক শক্তিশালী এবং নির্ভুলভাবে এআইয়ের বিভিন্ন কাজ করতে সক্ষম।
তবে কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। গুগল নিজেই উল্লেখ করেছে যে জেমিনি ন্যানোর অন-ডিভাইস সংস্করণে কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সারসংক্ষেপগুলো সাধারণত তিনটি বুলেট পয়েন্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ, এবং ছবির বর্ণনাগুলো বর্তমানে শুধুমাত্র ইংরেজিতে পাওয়া যায়। ফলাফলের গুণমান নির্দিষ্ট ডিভাইসে চলমান জেমিনি ন্যানোর সংস্করণের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে।
জেমিনি ন্যানোর দুটি প্রধান সংস্করণ রয়েছে:
- জেমিনি ন্যানো XS: এটি স্ট্যান্ডার্ড সংস্করণ, যার আকার প্রায় 100MB।
- জেমিনি ন্যানো XXS: এটি আরও ছোট সংস্করণ, যা XS সংস্করণের এক চতুর্থাংশ। তবে, এটি শুধুমাত্র টেক্সট-ভিত্তিক এবং এর কনটেক্সট উইন্ডো ছোট, যার মানে এটি একবারে কম তথ্য প্রক্রিয়া করতে পারে।
এই সীমাবদ্ধতাগুলো সত্ত্বেও, অন-ডিভাইস এআই-এর সুবিধাগুলো অনেক বেশি। ক্লাউড সার্ভারের উপর নির্ভর না করে স্থানীয়ভাবে ডেটা প্রক্রিয়া করার ক্ষমতা গতি, গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সুবিধা দেয়।
অ্যান্ড্রয়েড ইকোসিস্টেমের জন্য আশীর্বাদ
এই উদ্যোগটি পুরো অ্যান্ড্রয়েড ইকোসিস্টেমের জন্য একটি বড় জয় হতে চলেছে। যদিও গুগলের পিক্সেল ডিভাইসগুলো ইতিমধ্যেই ব্যাপকভাবে জেমিনি ন্যানো ব্যবহার করছে, তবে এই নতুন এপিআইগুলো অন-ডিভাইস এআই-এর সুবিধা অনেক বেশি ডিভাইসে ছড়িয়ে দেবে।
ওয়ানপ্লাস, স্যামসাং এবং শাওমির মতো অন্যান্য ফোন নির্মাতারাও তাদের ডিভাইসগুলোকে গুগলের এআই মডেল সমর্থন করার জন্য ডিজাইন করছে। যত বেশি ফোন অন-ডিভাইস এআই ক্ষমতা গ্রহণ করবে, ডেভেলপারদের কাছে তাদের এআই-চালিত অ্যাপ্লিকেশনগুলোর জন্য একটি বৃহত্তর ব্যবহারকারীর বাজার তৈরি হবে। ওয়ানপ্লাস ১৩, স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৫ এবং শাওমি ১৫ এমন ডিভাইসগুলোর উদাহরণ, যেগুলো অন-ডিভাইস প্রক্রিয়াকরণ সমর্থন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অন-ডিভাইস এআই-এর এই ব্যাপক ব্যবহার শুধুমাত্র ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা বাড়াবে না, বরং অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপের ক্ষেত্রে উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করবে। ডেভেলপাররা আরও ব্যক্তিগতকৃত এবং প্রাসঙ্গিক অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে পারবে, যা ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী রিয়েল-টাইমে কাজ করতে সক্ষম হবে, একই সাথে তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করবে।
গুগল আই/ও-তে এপিআইগুলোর উন্মোচন
এই নতুন জেমিনি ন্যানো এপিআইগুলোর আনুষ্ঠানিক উন্মোচন গুগলের বার্ষিক আই/ও ডেভেলপার কনফারেন্সে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গুগল ইতিমধ্যেই "অ্যান্ড্রয়েডে জেমিনি ন্যানো: অন-ডিভাইস জেন এআই দিয়ে তৈরি" শিরোনামের একটি ডেডিকেটেড আই/ও সেশন নিশ্চিত করেছে, যা ডেভেলপারদের নতুন এপিআই এবং তাদের ক্ষমতা সম্পর্কে একটি বিস্তৃত ধারণা দেবে।
সেশন বর্ণনায় বিশেষভাবে "টেক্সট সারসংক্ষেপ, প্রুফরিড এবং পুনর্লিখন, সেইসাথে ছবির বর্ণনা তৈরি করার" ক্ষমতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা নতুন এমএল কিট এপিআই দ্বারা প্রদত্ত কার্যকারিতার সাথে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ। এটি ইঙ্গিত দেয় যে গুগল অন-ডিভাইস এআই-এর জন্য একটি বড় পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত, যা ডেভেলপারদের বুদ্ধিমান অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশনগুলোর একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি করতে সক্ষম করবে।
অন-ডিভাইস এআই ডেভেলপমেন্টের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা
বর্তমানে, যে ডেভেলপাররা তাদের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে অন-ডিভাইস জেনারেটিভ এআই বৈশিষ্ট্য যুক্ত করতে আগ্রহী, তারা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাধার সম্মুখীন হন। গুগল এআই এজ SDK (AI Edge SDK) সরবরাহ করে, যা মেশিন লার্নিং মডেল চালানোর জন্য NPU (Neural Processing Unit) হার্ডওয়্যার অ্যাক্সেস করতে দেয়। তবে, এই সরঞ্জামগুলো এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে এবং বর্তমানে পিক্সেল ৯ সিরিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এছাড়াও, এআই এজ SDK প্রাথমিকভাবে টেক্সট প্রক্রিয়াকরণের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
যদিও কোয়ালকম এবং মিডিয়াটেকও এআই ওয়ার্কলোড চালানোর জন্য এপিআই সরবরাহ করে, তবে বৈশিষ্ট্য এবং কার্যকারিতা ডিভাইস থেকে ডিভাইসে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পের জন্য সেগুলোর উপর নির্ভর করা কঠিন করে তোলে। বিকল্পভাবে, ডেভেলপাররা সরাসরি ডিভাইসে তাদের নিজস্ব এআই মডেল চালানোর চেষ্টা করতে পারে, তবে এর জন্য জেনারেটিভ এআই সিস্টেম এবং মোবাইল হার্ডওয়্যারের জটিলতা সম্পর্কে গভীর ধারণা প্রয়োজন।
নতুন জেমিনি ন্যানো এপিআই স্থানীয় এআই প্রয়োগের প্রক্রিয়াটিকে সহজ করার প্রতিশ্রুতি দেয়, যা ডেভেলপারদের জন্য তাদের অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে এআই-চালিত বৈশিষ্ট্য যুক্ত করা তুলনামূলকভাবে দ্রুত এবং সহজ করে তুলবে।
গোপনীয়তা এবং সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া
ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে অন-ডিভাইস এআই-এর সবচেয়ে জোরালো যুক্তি হলো, ডেটা কোনো দূরবর্তী সার্ভারে না পাঠিয়ে স্থানীয়ভাবে প্রক্রিয়াকরণ করা যায়। ডেটা লঙ্ঘন এবং গোপনীয়তা উদ্বেগের যুগে, রিমোট সার্ভারে না পাঠিয়ে স্থানীয়ভাবে ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করার ক্ষমতা একটি বড় সুবিধা।
অধিকাংশ ব্যবহারকারী সম্ভবত তাদের ব্যক্তিগত ডেটা তৃতীয় পক্ষের ক্লাউড পরিষেবাতে দেওয়ার চেয়ে নিজেদের ডিভাইসে রাখতে পছন্দ করবে। অন-ডিভাইস এআই এই স্তরের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে, যাতে সংবেদনশীল তথ্য সুরক্ষিত এবং ব্যক্তিগত থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, গুগলের পিক্সেল স্ক্রিনশট (Pixel Screenshots) নামক ফিচারটি সমস্ত স্ক্রিনশট সরাসরি ব্যবহারকারীর ফোনে প্রক্রিয়াকরণ করে, ক্লাউডে পাঠায় না। একইভাবে, মটোরোলার (Motorola) নতুন রেজর আল্ট্রা (Razr Ultra) ফোল্ডেবল ফোনটি স্থানীয়ভাবে ডিভাইসে নোটিফিকেশনগুলোর সারসংক্ষেপ করে, যেখানে তুলনামূলকভাবে কম ক্ষমতাসম্পন্ন বেস মডেল রেজর (Razr) প্রক্রিয়াকরণের জন্য নোটিফিকেশনগুলো একটি সার্ভারে পাঠায়।
এই উদাহরণগুলো গোপনীয়তা এবং সুরক্ষা বাড়ানোর উপায় হিসেবে অন-ডিভাইস এআই এর ক্রমবর্ধমান প্রবণতা প্রদর্শন করে। স্থানীয়ভাবে ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করে, অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যবহারকারীর গোপনীয়তার সাথে আপোস না করে বুদ্ধিমান বৈশিষ্ট্য সরবরাহ করতে পারে।
মোবাইল এআই-এ ধারাবাহিকতা স্থাপন
জেমিনি ন্যানোর সাথে নির্বিঘ্নে একত্রিত হওয়া এপিআইগুলোর প্রকাশ মোবাইল এআই-এর খণ্ডিত পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় ধারাবাহিকতা আনতে পারে। তবে, এই উদ্যোগের চূড়ান্ত সাফল্য গুগল এবং ওইএমগুলোর (Original Equipment Manufacturers) মধ্যে সহযোগিতার উপর নির্ভর করে। বিভিন্ন ডিভাইসে জেমিনি ন্যানোর ব্যাপক সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে।
গুগল অন-ডিভাইস এআই প্রচারের জন্য একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, কিছু কোম্পানি তাদের নিজস্ব মালিকানাধীন সমাধান অনুসরণ করা বেছে নিতে পারে। এছাড়াও, এমন কিছু ডিভাইস থাকবে যেগুলোতে স্থানীয়ভাবে এআই মডেল চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রসেসিং ক্ষমতা নেই। এর মানে হলো, অন-ডিভাইস এআই গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্ভবত ধীরে ধীরে হবে, যেখানে কিছু ডিভাইস এবং অ্যাপ্লিকেশন অন্যদের চেয়ে দ্রুত এই প্রযুক্তি গ্রহণ করবে।
এই চ্যালেঞ্জগুলো সত্ত্বেও, অন-ডিভাইস এআই-এর সম্ভাব্য সুবিধাগুলো অনস্বীকার্য। ডেভেলপারদের বুদ্ধিদীপ্ত, গোপনীয়তা-সচেতন অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করার সরঞ্জাম দিয়ে গুগল মোবাইল কম্পিউটিংয়ের ভবিষ্যৎ গঠনের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিভিন্ন নির্মাতাদের মধ্যে এআই মডেলের মান standardization ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে উন্নত করবে, তা ডিভাইস যাই হোক না কেন।
নতুন জেমিনি ন্যানো ইন্টিগ্রেশন অ্যাপের আকার এবং এআই বৈশিষ্ট্য চালানোর জন্য ক্লাউড অবকাঠামোর উপর নির্ভরতা কমিয়ে দেবে। এটি নিশ্চিত করবে যে ব্যবহারকারীর ডেটা ক্লাউডের সাথে শেয়ার করা হয়নি এবং স্থানীয়ভাবে ডিভাইসে প্রক্রিয়া করা হয়েছে, যা ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা বাড়ায়।
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অন-ডিভাইস এআই ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই অফলাইন মোডে কাজ করবে। এটি ব্যবহারকারীদের সীমিত বা নেটওয়ার্ক সংযোগ নেই এমন অঞ্চলে এআই বৈশিষ্ট্য থেকে সুবিধা পেতে দেবে এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলো কম ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করবে এবং আরও দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাবে।
নতুন এপিআইগুলো নতুন ব্যবহারের সুযোগ উন্মোচন করবে যা ক্লাউড-ভিত্তিক এপিআই দিয়ে সম্ভব নয়, যেমন রিয়েল টাইম অনুবাদ, ছবি চেনা এবং ভাষা প্রক্রিয়াকরণ। এটি উৎপাদনশীলতা, বিনোদন, সুবিধা এবং শিক্ষার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে অ্যাপ্লিকেশনগুলোর একটি নতুন প্রজন্ম আনবে।
অ্যান্ড্রয়েডে অন-ডিভাইস এআই-এর ইন্টিগ্রেশন শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়; এটি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ যা মোবাইল শিল্পের প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতিকে নতুন আকার দিতে পারে। যে কোম্পানিগুলো এই প্রবণতাকে গ্রহণ করবে এবং অন-ডিভাইস এআই-এ বিনিয়োগ করবে তারা আগামী বছরগুলোতে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ভালো অবস্থানে থাকবে।
মোবাইল কম্পিউটিংয়ের ভবিষ্যৎ বুদ্ধিদীপ্ত, ব্যক্তিগত এবং সুরক্ষিত। অন-ডিভাইস এআই এই দৃষ্টিভঙ্গির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ডেভেলপারদের জেমিনি ন্যানোর ক্ষমতা দিয়ে গুগল উদ্ভাবন এবং ব্যবহারকারী-কেন্দ্রিক ডিজাইনের একটি নতুন যুগের পথ প্রশস্ত করছে।
ডেভেলপারদের জন্য চ্যালেঞ্জ হলো ডিভাইসের ক্ষমতা শেষ না করে বা অবাঞ্ছিত ফলাফল না দিয়ে এআই মডেলগুলোর ক্ষমতা ব্যবহার করা। এর জন্য এআই বাস্তবায়নের সতর্কতার সাথে অপটিমাইজেশন প্রয়োজন হবে, মডেল কম্প্রেশন, কোয়ান্টাইজেশন এবং প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতার দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে।
ডেভেলপারদের তাদের অ্যাপ্লিকেশনগুলো এমনভাবে ডিজাইন করতে হবে যাতে এআই মডেলগুলো ব্যবহারকারী ইন্টারফেসের সাথে নির্বিঘ্নে একত্রিত হয়ে একটি স্বজ্ঞাত অভিজ্ঞতা তৈরি করে। তাদের এআই ক্ষমতা এবং অ্যাপের ব্যবহারযোগ্যতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। ব্যবহারকারীরা যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হচ্ছেন, সেগুলোর সৃজনশীল সমাধানের উপর সাফল্য নির্ভর করবে।
অন-ডিভাইস এআই এপিআই-এর ভবিষ্যতের প্রভাব
অন-ডিভাইস এআই এপিআইগুলোর প্রকাশ, যা জেমিনি ন্যানোর সাথে মিথস্ক্রিয়া করতে সক্ষম করে, মোবাইল প্রযুক্তি এবং অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের উপর দীর্ঘমেয়াদী transformational প্রভাব ফেলবে এবং এখানে কিছু সম্ভাব্য দৃষ্টিভঙ্গি দেওয়া হলো:
বর্ধিত ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা: অ্যাপগুলো আরও ব্যক্তিগতকৃত এবং সময়োপযোগী হতে পারে। ভবিষ্যদ্বাণীমূলক টেক্সট ইনপুট, রিয়েল-টাইম ভাষা অনুবাদ এবং স্মার্ট কনটেন্ট সুপারিশের মতো বৈশিষ্ট্য উৎপাদনশীলতা এবং সুবিধা বাড়াতে পারে।
উন্নত নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা: যেহেতু এআই প্রক্রিয়াকরণ সরাসরি ডিভাইসে হয়, তাই এটি ক্লাউড-ভিত্তিক ডেটা লঙ্ঘনের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। সংবেদনশীল ডেটা একটি সুরক্ষিত, অফলাইন পরিবেশে প্রক্রিয়াকরণ করা যেতে পারে, যা নিশ্চিত করে যে ব্যক্তিগত তথ্য ব্যক্তিগত এবং তৃতীয় পক্ষের কাছে দুর্গম থাকে।
বৃদ্ধিযোগ্য সুবিধা: এআই প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য আরও অ্যাক্সেসযোগ্য অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অন-ডিভাইস এআই স্ক্রিন রিডিং উন্নত করতে পারে, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য বিস্তারিত ছবির বর্ণনা তৈরি করতে পারে এবং প্রযুক্তিকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে অন্যান্য সহায়ক সরঞ্জাম সরবরাহ করতে পারে।
উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক মডেল: ডেটা প্রক্রিয়াকরণ বা ক্লাউড রিসোর্সের জন্য চার্জ নেওয়ার প্রয়োজন ছাড়াই প্রিমিয়াম ফাংশনালিটিগুলি দিয়ে অন-ডিভাইস এআই বিনামূল্যে অ্যাপগুলোর ব্যবহার বাড়াতে পারে। এই পদ্ধতি ব্যবহারকারীর সম্পৃক্ততা উন্নত করতে পারে এমন মূল্যবান পরিষেবাগুলোর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে নতুন ব্যবসায়িক মডেলের দিকে পরিচালিত করতে পারে।
এজ কম্পিউটিং ক্ষমতা: এই এপিআইগুলোর সূচনা এজ কম্পিউটিংকেও উৎসাহিত করবে, যেখানে ডেটা সৃষ্টির উৎসের কাছাকাছি প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। এটি ক্লাউড অবকাঠামোর উপর নির্ভরতা কমায় এবং রিয়েল টাইম অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে সহজতর করে, যেখানে কম লেটেন্সি সমালোচনামূলকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যেমন AR/VR, গেমিং এবং স্বায়ত্তশাসিত যানবাহন।
এআই দক্ষতা প্রশিক্ষণ এবং বিকাশ: ডেভেলপাররা যখন এই সরঞ্জামগুলো ব্যবহার করা শুরু করবেন, তখন তাদের ডিভাইসে এআই মডেল ডিজাইন, প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োগ করার জন্য নতুন যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এটি প্রান্ত এআই প্রযুক্তিতে উদ্ভাবনে সক্ষম একটি বিশেষ কর্মীবাহিনীর বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দিতে পারে।
মোবাইল ডিভাইস বিবর্তন: অন-ডিভাইস এআই-এর ড্রাইভ বিশেষ মোবাইল হার্ডওয়্যার যেমন NPUs-এর উন্নয়নকে প্রভাবিত করতে পারে, যাতে এআই টাস্কগুলি দক্ষতার সাথে পরিচালনা করা যায়। এটি মোবাইল অ্যাপের মধ্যে এআই এর কর্মক্ষমতা বাড়াবে, লেটেন্সি কমাবে এবং শক্তি সাশ্রয় বাড়াবে।
আন্তঃকার্যকারিতা এবং মান: গুগলের উদ্যোগ সম্ভবত অন-ডিভাইস এআই কীভাবে বাস্তবায়ন এবং পরিচালনা করা উচিত সে সম্পর্কে শিল্প মানগুলির উত্থানকে উৎসাহিত করবে। স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতিগুলি ডেভেলপার টাস্কের কর্মক্ষমতা সহজতর করবে, ডিভাইসগুলিতে ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করবে এবং সহযোগিতা কার্যক্রমের মতো ecosystem গুলোর সাথে উদ্ভাবন ত্বরান্বিত করবে, যা মিথস্ক্রিয়া জড়িত।
নৈতিক বিবেচনা: অন-ডিভাইস এআই-এর প্রসারিত ব্যবহারের সাথে অ্যালগরিদমের সম্ভাব্য পক্ষপাত, ডেটা গোপনীয়তা সীমাবদ্ধতা এবং এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতির অন্যান্য প্রভাবের মতো বিষয়গুলি সম্বোধন করা গুরুত্বপূর্ণ। ন্যায়সঙ্গত এআই বাস্তবায়নকে সহায়তা করা হবে।
এই দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বিবেচনার মাধ্যমে, গুগল এর জেমিনি ন্যানೋ ব্যবহার করে প্ল্যাটফর্মগুলি দ্বারা চালিত অন-ডিভাইস এআই মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহারের পদ্ধতিতে পরিবর্তন সহজতর করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার ফলে আরও বুদ্ধিমান, নিরাপদ এবং আরও অ্যাক্সেসযোগ্য অ্যাপ্লিকেশান তৈরি হয় যা বিশ্বের শেষ গ্রাহকদের ক্রমবর্ধমান বিচিত্র প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে।